মঞ্জুর লিটন ,আগৈলঝাড়া প্রতিনিধিঃ
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মরহুম মালেক হাওলাদারের লাশ একমাস পরে আজ সকালে ফুলশ্রী কবর থেকে উত্তোলন করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ওসি তদন্ত আগৈলঝাড়া থানা জনাব মাজহারুল ইসলাম, অন্যান্য প্রশাসনের কর্মকর্তা, আগৈলঝাড়া উপজেলার রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি জনাব সাইফুল মৃধা, উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সরদার হারুন রানাসহ সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে লাশ উত্তোলন করা হয়।
বরিশালের আগৈলঝাড়ায় শ্বশুরকে হত্যার অভিযোগ এনে শ্যালক, তাদের স্ত্রী নামে অভিযোগ দেওয়ার প্রেক্ষিতে বরিশাল চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে এ লাশ উঠানো করা হল। এজাহার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফুল্লশ্রী গ্রামের বিশিষ্ট প্রবীন ব্যবসায়ি আব্দুল মালেক হাওলাদার চলতি বছর ৮মার্চ রাতে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন। পরদিন সকালে যথাযথ ধর্মীয় রীতি মেনে তাকে দাফন করা হয়। এদিকে মালেক হাওলাদারের একমাত্র মেয়ে জামাতা একই গ্রামের আইয়ুব আলী পাইকের ছেলে আসাদুল হক পাইক ওরফে বুলু তার শ্বশুর আব্দুল মালেক মিয়ার মৃত্যু স্বাভাবিক নয়; বরং তাকে হত্যা করা হয়েছে এমন অভিযোগ এনে গত ১৫মার্চ বরিশাল অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে তিন পুত্র, তাদের স্ত্রী, ছেলেসহ সাত জনকে আসামী করে দঃবিঃ ৩০২/৩৪ নালিশী মামলা দায়ের করেন, যার নং-১৮। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আমিনুল ইসলাম বাদীর আবেদনে আগৈলঝাড়া থানার ওসিকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গন্য করে তদন্তের নির্দেশ প্রদান করেন।
গত ১৭মার্চ রাতে ওসি মোঃ গোলাম ছরোয়ার নালিশী অভিযোগটি হাতে পেয়ে মামলা হিসেবে থানায় রেকর্ড করেন, যার নং-৪। ওই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয় ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলামকে। ওসি মোঃ গোলাম ছরোয়ার এজাহারের বরাত দিয়ে জানান, আব্দুল মালেক হাওলাদারের তিন পুত্র এক কন্যা থাকা সত্বেও একমাত্র মেয়ে লাইলী পারভীন নিজের ইচ্ছায় বাদী বুলুকে বিয়ে করায় তাকে সম্পত্তি থেকে বাদ রেখে তার জীবদ্দশায় তিনি তার তিন ছেলের নামে সমস্ত সম্পত্তি লিখে দেন। বাদী তা অস্বীকার করে ওই সম্পত্তি জোর পূর্বক তিন ছেলে লিখে নিয়েছে বলে আদালতে অভিযোগ করেন।
বাদী তার অভিযোগে আরও জানান, ছেলেরা তার বাবার কাছ থেকে জোর পূর্বক সম্পত্তি লিখে নেয়ার কারণে ব্যবসায়ি মালেক হাওলাদারের স্ত্রী (বাদীর শ্বাশুরী) জাহান আরা বেগম সম্পত্তি থেকে মেয়ে বঞ্চিত হওয়ার শোক ও পরিবারের মানসিক যন্ত্রনা সহ্য করতে না পেরে ২০১৯ সালের ১৩ জানুয়ারি হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। ছেলেদের নামে সম্পত্তি লিখে দেয়ার পরে আব্দুল মালেক হাওলাদার তার তিন ছেলেকে বোন লাইলীর নামে কিছু সম্পত্তি লিখে দেয়ার কথা বললেও ছেলেরা তাদের বোনের নামে কোন সম্পত্তি লিখে দেয়নি। ঘটনার দিন ৮মার্চ রাতে আব্দুল মালেক হাওলাদার তিন ছেলেকে ডেকে তাদের বোন লাইলী পারভীনের নামে কিছু সম্পত্তি লিখে দিতে বললেও তার ছেলেরা তা না দেয়ায় পিতা-পুত্রদের মধ্যে রাতে বাকবিতন্ডা হয়। ওই রাতেই মালেক হাওলাদারকে তার পুত্ররাসহ অন্যান্যরা বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাস রোধ করে মৃত্যু নিশ্চিত করে। পরদিন তরিঘরি করে মালেক হাওলাদারের লাশ দাফন করে তার পরিবার।
গতকাল সোমবার সকালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল রব হাওলাদার ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। নালিশী অভিযোগের বিবাদী আব্দুল মালেক হাওলাদারের বড় ছেলে ব্যবসায়ি মাসুদ হাওলাদার ওরফে খোকন বলেন, মামলার বাদীর সাথে তাদের ৪৫বছর পর্যন্ত পূর্ব বিরোধ চলে আসছে। তার একমাত্র বোন লাইলী বেগমকে বিয়ে দিলে মামলার বাদী আসাদুজ্জামান বুলু শুধু সম্পত্তির লোভে আমার বোনকে ৮৮সালে অপহরণ করে। তার বিরুদ্ধে অপহরণ মামলাও করা হয়। সেই থেকেই আমার পিতাসহ আমাদের বিরুদ্ধে হয়রানীর জন্য অন্তত ৪০টি মামলা দায়ের করেছে ওই বুলু।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি (তদন্ত) মাজহারুল ইসলাম জানান, মামলার তদন্ত চলমান রয়েছে। হত্যা না স্বাভাবিক মৃত্যু তা নির্ধারনের জন্য কবর থেকে লাশ উত্তোলনের পর ময়নাতদন্ত শেষে জানা যাবে। ঘটনাটা নিয়ে আগৈলঝাড়া ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
All Right Reserve Daily Somoyer Barta © 2020.